গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামে চুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবকের উপর অমানুষিক বর্বরতা চালিয়েছে যুবলীগের এক নেতা। শরীরে ভাঙ্গা হাড় নিয়ে এ য্বুকটি এখন মৃত্যুশয্যায়। অসহায়ত্বের কবলে থাকায় এখনও পরিবারটি যুবকের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে পারেনি।
অভিযুক্ত এম কাওসার গফরগাঁও উপজেলা যুবলীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্নআহবায়ক। তাঁর বাড়ি গফরগাঁও উপজেলার বারবারিয়া ইউনিয়নের লক্ষনপাড়া গ্রামে। সে শ্রীপুরের টেপিরবাড়ি এলাকায় জায়গা কিনে বসবাস করে আসছেন।
আহত যুবক আলমগীর (২০) নেত্রকোনা জেলার বারহাট্রা উপজেলার ইসপিতাপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। সে মা বাবার সাথে মুলাইদ এলাকার হোসেন মৃধার বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় জামান ফ্যাশন নামের একটি কারখানায় আয়রনম্যান পদে চাকুরী করত। তাঁর বাবা মুলাইদ গ্রামের শফিকের মোড় এলাকার একজন চা দোকানি।
গত ৯ এপ্রিল রাতে কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে টেপিরবাড়ি গ্রামের একট্ িসড়ক থেকে এ যুবককে ধরে তাঁর নিজ বাড়িতে নিয়ে সারারাত ধরে নির্যাতন করেন অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা। পরদিন তাঁর স্বজনরা তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
যুবকের স¦জনরা জানায়,তাঁরা জীবিকার সন্ধানে গত ১০বছর ধরে শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।তাদের পরিবারের সদস্য আলমগীর হোসেনও তার স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যা নিয়ে একসাথে বসবাস করতো। আলমগীরের বাবা চা দোকান ও আলমগীর জামান ফ্যাশন নামের একটি কারখানায় আয়রনম্যানের কাজ করত। গত ৯ এপ্রিল রাতে আলমগীর কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাটির মসজিদের সামনের সড়ক থেকে যুবলীগ নেতা কাওসার কয়েকজন দিয়ে তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে দড়ি দিয়ে বেঁধে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সারারাত ধরে লোহার রড দিয়ে নির্যাতন শুুরু করেন। নির্যাতনে যুবকের ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায় , মাথা সহ সারা শরীরে জখম হয়। পরদিন সকালে বাড়ির বাহিরে একটি গাছে দড়ি দিয়ে বেঁেধ রাখা হয় যুবককে। এসংবাদ শুনে যুবকের স্বজনরা তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে দুই দিন পর এই যুবলীগ নেতা তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বের করে হাসপাতালে চিকিৎসার কাগজপত্র জোড় করে নিয়ে যায়। পরে এই যুবলীগ নেতা তার লোক দিয়ে যুবককে ময়মনসিংহের একটি ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করেন। এসময় কয়েকটি ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আপোষের প্রস্তাব দেয় যুবলীগ নেতা কাওসার। আপোষের প্রস্তাব যুবকের পরিবার প্রত্যাখান করায় জোড়পূর্বক সেখান থেকে বের করে দেয়। এর পর থেকে পরিবারটি কার্যত অবরুদ্ধ। যুবলীগ নেতার হুমকীতে গত কয়েকদিন ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যুবকটিও কোন চিকিৎসার জন্য বের হতে পারছে না।
আহত যুবক আলমগীর হোসেনের ভাষ্য আমি বারবার বলেছি আমি কোন চুরি করিনা, আমি কাজ করে খাই, তিনি কোন কথা শুনেননি। কয়েকবার পায়ে ধরেছি, তাতেও মন গলেনি। সারারাত আমাকে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম, জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখি আবার মারা হচ্ছে। এদিকে আমাকে মেরে গুরুতর আহত করে আবার সকালে খবর দিয়ে পুলিশ এনে আমাকে তাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল যুবলীগ নেতা, কিন্তু আমার অবস্থা খারাপ থাকায় পুলিশ আমাকে নেয়নি। তারা আমাকে এ অবস্থায় ফেলে চলে গেছে।
আলমগীর হোসেনের বাবা কালাম মিয়া জানান, একদিকে আমার ছেলেটাকে তারা এমনভাবে মারল আবার তার উপর অব্যাহত হুমকী এলাকাছাড়ার জন্য। যুবলীগ নেতার হুমকীত গত ১৫ দিন ধরে দোকান খুলতে পারিনা। পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা কাওসার জানান, ছেলেটাকে চুরির কাজে হাতেনাতে ধরেছি। তাই তাকে শায়েস্তা করেছি। এটা অন্যায় কিছু না।পরে আবার তাকে আমার নিজ খরচে চিকিৎসাও দিয়েছি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক ( অপারেশন) হেলাল উদ্দিন জানান, এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল তবে ছেলেটিকে যুবলীগের এই নেতা মারধর করেননি, চুরির অভিযোগে সাধারণ জনগনের পিটুনিতে ছেলেটি আহত হওয়ায় তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সাধারন লোকজনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।