আগামীকাল ১ মার্চ থেকে শাকিব–বুবলীর নতুন ছবি পাসওয়ার্ড-এর শুটিং শুরু হচ্ছে। পরিচালনা করছেন মালেক আফসারী। ছবিটি আগামী ঈদুল ফিতরে মুক্তির লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে। ছবিটি নিয়ে বুবলী বলেন, ‘প্রথমত, মালেক আফসারী একজন স্বনামধন্য পরিচালক। তাঁর সঙ্গে প্রথমবারের মতো কাজ করতে যাচ্ছি। তাঁর এই ঘর এই সংসার ছবিটি ছোটবেলায় কতবার যে দেখেছি! আমি তাঁর একজন ভক্ত। দ্বিতীয়ত, এই ছবির প্রযোজক নায়ক শাকিব খান নিজেই। সেটাও আমার জন্য একটা বিরাট ব্যাপার।’
থ্রিলার অ্যাকশন ঘরানার গল্প নিয়ে পাসওয়ার্ড ছবির কাহিনি। বুবলী জানান, ‘গল্প যতটুকু শুনেছি, তাতেই বোঝা যাচ্ছে রোমাঞ্চে ভরপুর কাজ হবে এটা।’
বুবলী
বুবলী
শুরুর দিকের গল্প
বর্তমান থেকে আমরা অতীতে ফিরে যাই। ২০১৫ সালের শেষের দিকের কথা। তখন একটি চ্যানেলে সংবাদপাঠক ছিলেন বুবলী। সে সময় শাকিব খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে পিয়া রে নামে একটি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন নায়িকা খোঁজ চলছে। এক পরিচিতজনের মাধ্যমে বুবলীর কাছে ওই ছবিতে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব আসে। সিনেমায় অভিনয়ের প্রতি ছেলেবেলা থেকেই আগ্রহ ছিল বুবলীর। এই ভেবে নাচ ও অভিনয়ের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তাই নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব পেয়ে তা হাতছাড়া করতে চাননি। প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য! কয়েকবার আলোচনা হলেও সে সময় পিয়া রে ছবির নির্মাণ থেমে যায়। আশাহত হলেও হাল ছাড়েননি বুবলী। বলেন, ‘এর কিছু দিনের মধ্যেই একই পরিচালক আমাকে তাঁর বসগিরি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। আমি রাজি হই। এরপর তো আমার জীবনের নকশাই পাল্টে যায়।’
অভিষেকেই পাস
বসগিরি ও শুটার ছবির শুটিং শুরুর কয়েক দিন আগে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুবলীকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। শুটিংয়ের আগেই আলোচনায় চলে আসেন বুবলী। ছবি মুক্তির আগেই ‘দিল দিল’ ও ‘বুবলী বুবলী’ গানে তাঁর উপস্থিতি চারদিকে আলোড়ন তোলে। ছবিটি মুক্তির পর অভিষেকেই সফলতার স্বাদ পান বুবলী। তিনি বলেন, ‘দর্শকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা শুরু থেকেই আমাকে ও আমার ছবিকে গ্রহণ করেছেন। প্রথম শ্রম, ঘাম, চেষ্টা, আন্তরিকতা সার্থক হয়েছিল আমার। এমনটা হওয়া আমার জন্য খুব দরকার ছিল। কারণ পরিবারের সবার বাধা উপেক্ষা করে আমি সিনেমা করতে এসেছিলাম।’
তবে দর্শকের পাশাপাশি নিজের সফলতার ভাগিদার হিসেবে বুবলী তাঁর নায়ক শাকিব খানের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর ভাষায়, বসগিরি ছবির শুটিং চলতে চলতে শুটার নামে শাকিব খানের বিপরীতে আরেকটি ছবির কাজ শুরু হয়। দুটি ছবিই মুক্তি পায় একই দিনে।
পরিবারের বাধা ও তা পেরিয়ে আসা
চলচ্চিত্রে আসার পথ বুবলীর জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। প্রথম ছবিতে অভিনয়ের কথাবার্তা যখন চূড়ান্ত, তখন পরিবারের বাধা বুবলীর সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বুবলীর মধ্যবিত্ত পরিবার। বাংলাদেশের সিনেমার জগৎকে ঘিরে সবার যে গতানুগতিক ধারণা, সেটা বুবলীর পরিবারকেও দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। তারা ভেবেছিল মেয়ে ‘নষ্ট’ হয়ে যাবে! অনিশ্চিত একটা জীবনে জড়িয়ে যাবেন! পরে প্রযোজকের পক্ষ থেকে বুবলীর বাবা–মাকে বোঝানো গেলেও বাকি দুই বোন কোনোমতেই বুবলীকে সিনেমায় অভিনয়ের অনুমতি দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু এরপরও নিজের স্বপ্নের ওপর জোর আস্থা থাকায় সিনেমায় নাম লেখান বুবলী। পরিবারের সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই কাজ শুরু করেন। এরপর প্রথম ছবি মুক্তি পেলে পরিবারের ‘না’ বদলে যায় ‘হ্যাঁ’–তে। অভিনয়জীবনের শুরুর দিকের কথা মনে করে বুবলী বলেন, ‘অভিনয় শুরুর প্রায় ৮ মাস পর্যন্ত বোন আর দুলাভাইয়েরা আমার সঙ্গে কথা বলেননি। পরে তাঁরা যখন দেখেছেন, খ্যাতি আর সিনেমা জগতে উচ্চকিত আলো আমাকে বিগড়ে দেয়নি, বরং চারদিকে আমাকে নিয়ে প্রশংসা হচ্ছে, তখন তাঁরা আমার প্রতি সহজ হয়েছেন।’
এখনো পর্যন্ত বুবলীর প্রতিটি ছবির নায়ক শাকিব খান
এখনো পর্যন্ত বুবলীর প্রতিটি ছবির নায়ক শাকিব খান
তাঁকে নিয়ে ট্রল
তারকাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের ট্রল হয়। সেই সব ট্রলে তারকারা কখনো কখনো বিরক্ত হন, আবার কেউ কেউ নীরবেই সয়ে যান। বেশ অনেক দিন ধরেই শাকিব খান ও বুবলীকে ঘিরে নানা ধরনের ট্রল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে গেছে। এই সব ট্রল বুবলীর চোখ এড়ায়নি। তবে তা দেখে তিনি বিরক্ত হন না। মাঝেমধ্যে খানিকটা মন খারাপ হয়। কিন্তু বুবলীর কথা হলো, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছেই যে আমি ভালো হতে পারব, বিষয়টি তা নয়। আবার আমার কাজ যে সবার ভালো লাগবে, তাও নয়। মাঝেমধ্যে খারাপ লাগলেও এই সব ট্রল স্রেফ মজা হিসেবেই ধরে নিই আমি। বিরক্ত হই না।’
সহশিল্পীর বিয়ে, নিজের বিয়ে
বেশ ধুমধাম করে ঢাকার চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির বাগদান হয়ে গেল। বাগদানের ঝলমলে ছবির ছড়াছড়ি খবরের কাগজ আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ছবিগুলো বুবলীর নজরেও পড়েছে। তিনি বলেন, ‘বাগদানের সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো দেখে বেশ ভালো লেগেছে। পরীমনির জন্য শুভ কামনা।’
‘এসব দেখে আপনার বিয়ে করতে ইচ্ছে করে না?’—হাসতে হাসতে। বলেন, ‘সিরিয়ালি আমারটাও আসবে।’
সেটা কবে? বলেন, ‘বিয়ে পরিকল্পনা করে হয় নাকি! দেখবেন হুট করেই স্বপ্নের মানুষ চলে এসেছে আমার জীবনে।’ এখন স্বপ্নে কোনো মানুষ নেই? প্রশ্নটির উত্তর মজা করে দিলেন বুবলী, ‘স্বপ্নের মানুষ স্বপ্নেই আছে, বাস্তবে নাই।’
প্রেম-বিয়ের গুজব…
দীর্ঘদিন জুটি বেঁধে অভিনয় করার পর প্রেম, বিয়ে নিয়ে নায়ক–নায়িকার গুজব ঢাকার চলচ্চিত্রে কোনো নতুন ঘটনা নয়। শাকিব ও বুবলীর বেলায়ও তা–ই হচ্ছে। ঢালিউডের বাতাসে কান পাতলে এই দুজনকে নিয়ে প্রেম, এমনকি বিয়ের গুঞ্জনও শোনা যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে বুবলী মুখ খোলেননি কখনোই। নতুন করে প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে এলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রেমের গুঞ্জনটির জন্ম দর্শকদের কল্পনা থেকে। এখানেই এই গুঞ্জনেই আমাদের জুটির সার্থকতা।’
শাকিবের বাইরে অভিনয়
অনেকেরই ধারণা, শাকিবের বাইরে অন্য নায়কের সঙ্গে বুবলী অভিনয় করতে চান না। তবে গত এক বছর ধরেই গণমাধ্যমে বুবলী বলে আসছেন, শাকিবের বাইরে অন্য নায়কের সঙ্গে অভিনয়ে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু কাজের বেলায় এর প্রতিফলন এখনো দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে বুবলীর বক্তব্য, ‘আমি অন্য নায়কের সঙ্গে সব সময়ই কাজ করতে চাই। এ ব্যাপারে যতগুলো ছবির জন্য মিটিং করেছি, তা ব্যাটে–বলে মেলেনি। কলকাতার একটা ছবিতেও কাজের কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় অন্য ছবির শুটিংয়ের কারণে কাজটি করা হয়নি। এখনো অন্য নায়কের সঙ্গে দুটি ছবির কাজ নিয়ে আলাপ চলছে।’