সড়কের ওপর একদল তরুণ-তরুণীরা সাপ-লুডু খেলছে, জাল টানিয়ে ভলিবল খেলছে একদল কিশোর। কেউ কেউ দল বেঁধে দৌড়াচ্ছে। ফুটবল খেলছে। পুরো সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ।
আজ রবিবার বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এভাবে দেড় হাজার শিশু-কিশোর ডুব দিয়েছিল আনন্দ সাগরে। ঢাকায় মাঠ কমছে, সড়কে হাঁটা যায় না। বন্দিঘরে মোবাইলে, ল্যাপটপে, কম্পিউটারে চোখ রেখে চলে শিশুজীবন। তবে আজ গাড়িমুক্ত সড়কে মুক্ত ছিল তাদের জীবন।
সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কেন্দ্রিয় সংসদের শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা গনপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি হেঁটে চলার ও বাইসাইকেল চালানোর লেন গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ ফুটপাত তৈরি করতে মেয়ররা ফুটপাত পরিস্কার করে দেবেন। আমরা সেখানে আর কাউকে বসতে দেব না। তবে বিষয়টি একবারে নয় পর্যয়ক্রমে করতে হবে। গাড়ি কেনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ভতুর্কি দিচ্ছে সরকার। কিন্তু যদি মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো চালু হয় তাহলে এই গাড়ির আর প্রয়োজন হবে না।
বাস মালিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভালো ভালো বাস চালু করেন, তাহলে ব্যক্তিগত গাড়ি কমে আসবে।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার সামনে তৈরি করা মঞ্চে আলোচনা চলে। পুরো অনুষ্ঠান আয়োজন করে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএসহ ৫৯টি সংস্থা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ঢাকায় যানজট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমরা যেসব ফ্ল্যাটে থাকি, সেই সব ফ্ল্যাটে ভিন্নতলার মানুষের সঙ্গে গাড়ি শেয়ার করতে পারি। একটা গাড়িতে একটা বাড়ির সব বাচ্চা স্কুলে যেতে পারে। শেয়ার করে গাড়ি কেনা ও মেরামত করতে পারি। এতে করে আমাদের খরচ ও পরিবেশ দু’টোই বাঁচবে। সভাপতির বক্তব্যে ডিটিসিএ এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, এখন ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি করে ১০ শতাংশের নিচে ট্রিপ সংগঠিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধি পেলে যানজট আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা পথচারী এবং সাইকেলবান্ধব শহর গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মজুমদার, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম রওশন আরা। আলোচনার পর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ছিল ঘুড়ি ওড়ানো, সাইক্লিং, স্কেটিং ও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন।