আজ সন্ধ্যায় ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। এই সিরিজে তৃতীয় দলটি ছিল জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ মূলত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচে জয় পেয়ে ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৪ সালের পর এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়। এর মাঝে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এবং চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। দেখে নেওয়া যাক দুই দেশের শক্তিমত্তা :
স্ট্রাইক রেটে এগিয়ে আফগানিস্তান
টেস্ট বা ওয়ানডে ক্রিকেটে দেখা হয় ব্যাটসম্যানের গড় কতো, কত রান করছে সে দলের হয়ে, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মূল বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে কত দ্রুত কত রান করছে। এই হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান যে ৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে, তাতে রানের হিসেবে এগিয়ে আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানরা।
কিন্তু সাকিবের স্ট্রাইক রেট কোনমতে ১২০ পার করলেও রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের স্ট্রাইক রেট ১২০ এর নিচে। ওদিকে মোহাম্মদ নবি যিনি দুদলের মুখোমুখি দেখায় আফগানিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তার স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর বেশ ওপরে। নবির ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট আরো বেশি, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রতি ১০০ বলে ১৪৬ রান তুলেছেন মোহাম্মদ নবি।
স্পিন বোলিংয়ে এগিয়ে আফগানিস্তান
নিজেদের কন্ডিশনে স্পিন বোলিং বাংলাদেশের অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই জায়গায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার, উইকেটের হিসেবেও এখন বিশ্বের টি-টোয়েন্টি বোলারদের মধ্যে প্রথম তিনজনের একজন সাকিব কিন্তু সাকিবকে যথাযথ সঙ্গ দেয়ার মতো টি-টোয়েন্টি স্পিনার বাংলাদেশ দলে কম।
রশিদ খানকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানের বোলিং লাইন আপ গড়ে ওঠে, কিন্তু তার পাশাপাশি মোহাম্মদ নবি ও মুজিব উর রহমান নিয়ন্ত্রণ করেন রানের গতি। বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান এবং মোহাম্মদ নবি তিনজনই ওভারপ্রতি ৬ এর কম রান দিয়ে আসছেন। এমনকি মুজিব রান দিয়েছেন ওভার প্রতি ৪.৭০। রশিদ এবং মুজিবের ক্যারিয়ার ইকোনমি রেটও ছয়ের নিচে। তাই তাদের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের জন্য রান তোলা কঠিন হয়ে পড়ে।
পেস বোলিংয়ে আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
সাকিব আল হাসানের সাথে বল করেন নিয়মিত সাইফুদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মুস্তাফিজুর রহমান সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ কঠিন এক বোলার ছিলেন কিন্তু চলতি বছরে মুস্তাফিজের বলার মতো পারফরম্যান্স নেই।৩৪ ম্যাচে ৫২ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের ইকোনমি রেট এখন ৭.৭৫। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচেও ৩ ওভার বল করে ৩১ রান দিয়েছেন মুস্তাফিজ। তবে অভিজ্ঞতা বা পারফরম্যান্স সব দিক থেকেই আফগানিস্তানের এই দলের পেস বোলারদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন মুস্তাফিজুর রহমান, সাইফুদ্দিন, শফিউলরা।
‘খেলার মুড’ পরিবর্তনে পার্থক্য
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, যদি টি-টোয়েন্টির কথা বলা হয় সেক্ষেত্রে আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। তার মতে, ওদের পাওয়ার হিটার অনেক বেশি, সেই সাথে খেলা কন্ট্রোল করার মতো কোয়ালিটি স্পিনার আছে। টি-টোয়েন্টিতে খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ভালো বোলার প্রয়োজন, আফগানিস্তানের বোলাররা খেলার মুড পরিবর্তন করতে পারে।
ব্যাটিংয়ে কোচ সালাউদ্দিন বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখলেও, তামিমের অভাবের কথা বলেছেন তিনি, ‘বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মন খুলে আসলে ব্যাট করতে পারছে না। আমার যেটা মনে হয় বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বোলিং নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত, রশিদ খান আছে মুজিব আছে, তাদের কাছ থেকে রান নিবো না কম নিবো এসব চিন্তা ম্যাচে পিছিয়ে দেয়। প্রতিদিন আপনি সবাইকে মারতে পারবেন না, আপনাকে খেলার দিন সেই মুহূর্তে ঠিক করতে হবে কার বল আপনি মারবেন।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘শেষ ম্যাচে সাকিব খুব ভালো ক্যালকুলেশন করেছে, একটু ম্যাচিওর্ড ব্যাটিং করলে বাংলাদেশ অনেক সুযোগ বের করতে পারবে। কারণ আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের অনেক উইক পয়েন্ট আছে। সেসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ যদি ঠিকঠাক পরিকল্পনা করতে পারে সেক্ষেত্রে সুযোগ বেড়ে যাবে।’