জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়তা চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় রবিবার নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দেওয়া উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশের উদ্দেশে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করার আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি একটি চিঠি তুলে দিয়েছেন তাঁর হাতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, জাতির পিতার খুনিরা যারা এই দেশে রয়েছে, তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেই বিষয়টি নিয়ে তাঁকে একটি চিঠি দিয়েছি। একথা তাঁকে আমি বলেছিও।’ তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন কোনো অপরাধীকে তিনি এদেশে থাকতে দেবেন না। সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল জাতির পিতার হত্যাকারী।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘খুনিদের অনেকে অনেক জায়গায় লুকিয়ে আছে। খোঁজখবর পাচ্ছি। সেসব দেশগুলোর কাছে কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদেরকে ফেরত নিয়ে যেন বিচারের রায় কার্যকর করতে পারি।’
জাতিসংঘে এবার যেসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের সফরে তিনি ‘ভ্যাকসিন হিরো’ অ্যাওয়ার্ড এবং যুব দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ইউনিসেফের বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এসব সম্মান আমি দেশের মানুষের প্রতি উৎসর্গ করেছি।’
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবারো বলেন, ‘এই সমস্যা মিয়ানমারই সৃষ্টি করেছে। তাদেরকেই তা সমাধান করতে হবে। তাদের দেশের মানুষ, বাইরের দেশে উদ্বাস্তু হয়ে আছে, সেটা কোনো ভালো কথা নয়।’
এ ছাড়া দেশে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যেন ওয়ান ইলেভেন না আসে এবং জনগণ উন্নয়নের সুফল পায়, সে কারণেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কোনো অপরাধীই ছাড় পাবে না, সে যে দলেরই হোক। ঋণ খেলাপি কমিয়ে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। জুয়া ও ক্যাসিনো সংস্কৃতরি বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের আবারো কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে মিশে আমাদেরকে চলতে হবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কুপ্রভাব যেনো না পড়ে। সেটা দলে হোক, কিংবা সমাজে। এ কারণেই এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলবে।’
যেকোনো কিছু ঘর থেকে শুরু করতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এ কারণেই নিজ দলের ভেতর থেকেই এই অভিযান শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাতে অনেকেই আমার ওপর অখুশি হতে পারেন। আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমার সম্পদের মোহ নেই, ক্ষমতারও মোহ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাবা দেশ স্বাধীন করে গেছেন, আমি দেশটিকে গড়তে চাই তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুষ্টিমেয় কিছু লোক সমাজটিকে কলুষিত করবে, সেটি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ওয়ান ইলেভেন আসবে না। যা করার আমিই করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীরা ভূমিকা রেখে চলেছেন। দেশে এক শটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। সেইসঙ্গে ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা বিমান চলাচলে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে জোড় গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে দলটির সভানেত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ তো আছেই। একটা দীর্ঘ সময় চলে গেছে। একটা কনফারেন্স হওয়া দরকার। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেব আমরা।’ নতুন কমিটি ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ আমার কাছে অচেনা নয়। যেটা করার আমি সময় মতো করব।’
যুক্তরাষ্ট্রে স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে সম্প্রতি কিছু বাংলাদেশির আটকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বাবা-মা এবং কমিউনিটির সচেতন হতে হবে।’ যেহেতু তারা বাংলাদেশি আমেরিকান, তাই এদেশের সরকারেরও করণীয় রয়েছে বলে মত দেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালিত হবে জাতিসংঘে। সেটি সেপ্টেম্বরে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতেও হতে পারে। সেইসঙ্গে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সহায়তার জন্য হওয়া কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র আদলে স্বাধীনতার ৫০ বছরে যদি নিউ ইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে যদি কিছু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে সরকার সর্বাত্মক সহায়তা দেবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মো. নূর এলাহি মিনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।