সিরাজগঞ্জ(সলঙ্গা)থেকে ফারুক আহমেদঃ
সিরাজগঞ্জ সলঙ্গাতে আর আগের মত তেমনি চোখে পড়ে না গ্রাম – বাংলার বধূদের শরতের সৌন্দর্য কাশফুল দিয়ে ঘর মোচার ঝাড়ু। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দুই মাস পর পরই আমাদের দেশে ঋতুর পরিবর্তন হয়। এই ঋতু পরিবর্তনে এখন বইছে শরৎকাল। প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুল জানিয়া দেয় শরতের আগমনী বার্তা। শরতের বিকালে নীল আকাশের নিচে দোলা খায় শুভ্র কাশফুল। হাওর ও নদী রেষ্টিত সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থানার বিভিন্ন খাল বিলের পাড় সাদা হয়ে থাকতো কাশফুলে। নানা ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে গ্রাম – গঞ্জের বধূরা কাশফুলের ঝাড়ু বানিয়ে দিত। আরো পুরুষেরা তা হাটে বাজারের বিক্রি করে সংসার চালাতো। নাগরিক কোলাহল আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে চুপিচুপি আসতো শরৎ। মাতোয়ারা করে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায়, কাশফুৃলের শুভ্রতায় কিংবা শিউলির ঘ্রাণে। তারপর,হারিয়ে যেতো দ্রুতই। শরৎ আসলে এমনই, স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে ম্মৃতিতে দোলাদিতো সব ঋতুতেই। তবে কিছু কিছু কাশফুল থানার ৩নং ধুবিল ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডে আমশড়া গ্রামে সাংবাদিক ডাক্তার ফারুক আহমেদর পুকুর পাড়ে দেখা যায়, এক জীবন সংসার যুদ্ধে জয়ী এক মহীষি নারীকে ঘর মোচার জন্য ঝাড়ু তৈরি জন্য কাশফুল তুলতে। গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাশবন ও তার তৈরি ঝাড়ু। ঋতু অনুসারে ভাদ্র – অশ্বিনজুরে শরৎকালের রাজত্ব। অতীতেও দেখা গেছে শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপ – ঝাড়, রাস্তা – ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে – কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি। সেগুলো আর চোখে পড়ছে না। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটার সঙ্গে আরেকটা। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিঁলিক বয়ে যেতো। কবি জীবনন্দ দাশ শরৎকে দেখেছেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যাই না আর। শরতের এই অপরুপ রুপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীর আর দেখার প্রয়োজন নেই সিদ্ধান্ত নেন। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই প্রকৃতি শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। তবে এবার একটু দেরিতেই কাশফুল ফটতে দেখা যায়। বাংলার প্রকৃতিতে শরতের এই দৃশ্য দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হয়ে যায়। জানা যায়,প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের মাঠে – ঘাটে কাশফুল ফুটতে দেখা যায়। এমনকি প্রগৈতিহাসিক কাল থেকে এদেশে কাশফুল ছিল। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই নদীর ধার, জলাভুমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা,পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেরে ওঠে। কাশফুলের এর বৈজ্ঞানিক নাম ঃ ছধপপযধৎস ংঢ়ড়হঃধহবস,এরা ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। চিরল পাতার দুই ধারে খুবই ধার। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কাশ। সনাতন ধর্মাবলন্বীদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ’ পুরাণ’ – এ কুশের স্থান খুবই উঁচুতে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন গ্রন্থ কুশজাতক কাহিনী অবলম্বন করে শাপমোচন’নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন। কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। শুভ্রতা অর্থে ভয় দূর করে শান্তির বারতা বয়ে আনে। শভু কাজে ব্যবহার করা হয় কাশফুলের পাতা বা ফুল। নদীর দু’ধারে, আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আর্বতে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন গ্রামবাংলার বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে মেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। কাশফুল তুলছে একটি নারী। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহরসহ গ্রামগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে শুইয়ে দিচ্ছে সাদা কাফনের ভেতর। সাধারণ মানুষের বিনোদন – প্রকৃতিতে দেখার শখ – অাহ্রাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এ কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজনও নেই। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু – মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধরা ঝাটা, ডালি,দোন,তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাঁউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন। যখন মানুষ কোনো জায়গায় কাশবন দেখেন। তখন মানুষ নিজের অজান্তে হারিয়ে যায়। অতীত হাতড়ে থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরিতে শরতের মায়াময় প্রকুতি সাজে ভিন্ন ভিন্ন রুপে। মেঘের ঋতু শরৎ শুভ্রতা, স্বচ্ছতার প্রতীক। আর এই শুভ্রতা মানুষের মনকে করে পবিত্র,প্রশান্ত। তাইতো ঋতু বা প্রকৃতির কাছে শুধু চাইলেই হবে না, নগরায়নের প্রভাব থেকে একে রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে, সমানভাবে।