ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক ও বর্তমানে শৈলকুপার ইউ.এন.ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের আরশী নগর গুচ্ছ গ্রামে ছিন্নমূল মানুষের জন্য ৫টি ঘর নির্মাণে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীন ২০১০-২০১৯ (সংশোধিত) এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় প্রতিটি ঘরের জন্য দেড় লক্ষ টাকা করে সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি.আই.সি কমিটির সভাপতি ও এসিল্যান্ড সদস্য সচিব হওয়ায় উভয় দায়িত্বে থাকা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিজেই ঘরগুলো নির্মাণ করেন। গত ২৭ মে ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয় বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণের মাত্র ৬ মাস যেতে না যেতেই প্রতিটি ঘরে ধরেছে ফাটল। ঘরের মেঝে, দেয়াল, বারান্দা, আরসিসি পিলার সহ সর্বত্রই ধরেছে ফাটল। ঘরপ্রাপ্ত ছিন্নমূল পরিবারের অভিযোগ নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহারের ফলে এ ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঘরগুলোর টিন ও দেওয়া হয়েছে নিম্নমানের। ঘরের চালা ও বারান্দায় ব্যবহৃত ০.৪৬ মিলিমিটার টিনের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে ০.২৬ মিলিমিটারের হালকা টিন।
ঘরপ্রাপ্ত ৭১’র রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহাজ উদ্দীন বলেন, মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিন সময়ে তড়িঘরি করে কোনরকমে দায়সারা ভাবে এসব ঘর নির্মাণ করেছেন ইউ.এন.ও সাইফুল ইসলাম। ব্যবহার করেছেন নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালু ও সিমেন্ট। ফলে ঘর গুলো ফাটল ধরে দ্রুত ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছিন্নমুল মানুষের জন্য উপহার এসব ঘর নির্মাণে অনিয়ম কাম্য নয়।
ঘরের বাসিন্দা ছিন্নমূল অসহায় বিধবা রাজিয়া খাতুন, পিনজিরা ও বেদানা খাতুন বলেন, স্বামী হারিয়েছি অনেক আগে, মানুষের বাড়ীতে কাজ করে কোনরকমে দিনযাপন করি। মাথা গোঁজার ঠাই ছিল না। পাঠকাঠির বেড়া আর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে কোন রকমে রাতে ঘুমাতাম। তবুও সেখানে শান্তি ছিল, ভেঙ্গে পড়লেও মরার ভয় ছিল না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছেন এটা আমাদের রাজপ্রাসাদ, কিন্তু কে জানতো সেই স্বপ্নের রাজপ্রাসাদই আমাদের মরণ ফাঁদ হবে। রাতে ভয়ে নির্ঘুমে কাটাই। সব সময় আতঙ্গের মধ্যে থাকি কখন যেন ঘর চাপা পড়ে মরে যাই এই ভয়ে। ভ্যান চালক স্বামী জুমারতকে নিয়ে গুচ্ছগ্রামের ঘরে থাকেন ষাটার্দ্ধো সারেজান নেছা তিনি বলেন সারা ঘরেই ফাটল ধরেছে, রাতভোর আতঙ্কে থাকি। কখনও আমি ঘুমাই, স্বামী জেগে থাকে আবার কখনও সে ঘুমাই আমি জেগে থাকি। একে অপরকে রাত জেগে পাহারা দিই, কখন ঘর ধসে পড়ে এই ভয়ে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়, টিনের ঘরের পরিবর্তে পাকা ঘর করে দিয়েছি, ১নং ইট দিয়ে কাজ করিয়েছি। আপনি বলছেন বিষয়টি আমি দেখবো।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, যিনি কাজটি করেছেন তাকে বলেন, আমিও তাকে বলছি, বিষয়টি আমি দেখবো।