জমে উঠেছে কলাপাড়ায় জনপ্রিয় গোলের গুড়ের বাজার। হাটের দিনসহ প্রতিদিন স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের ভিড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীসহ গুড় তৈরির কারিগররা।
তবে জলবায়ুর প্রভাবসহ রক্ষণাবেক্ষণ, লবণ পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া, অসাধু বনকর্মীর নির্বিচারে গোল বাগান উজাড় করায় ক্রমশই গোল গাছ ধ্বংস করা হচ্ছে। এ কারণে বাজারে কমে যাচ্ছে গোলের গুড়।
বছরের অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত দিনে দু’বার মাটির হাঁড়ি পেতে রস সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রস বাড়ির আঙিনায় অধিক তাপে উনুনে ফুটিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। মাটির হাঁড়িতেই এসব সংরক্ষণ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
অতি মিষ্টি এ গুঁড়ের পরিচিতি এক সময় এলাকায় থাকলেও বর্তমানে এটি বেশ বাণিজ্যিক প্রসারতা লাভ করেছে। চাহিদার তুলনায় কম হলেও বিভিন্ন হাটে-বাজারে এ গুড় পাওয়া যাচ্ছে।
গোল চাষিরা জানান, তাদের জীবিকার একটি অংশ গোল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা। প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে গোল গাছে একটি বা দুটি লম্বা ছড়ায় ফল ধরে। খেজুর গাছের মতো কাধিতে জন্মানো এ ফলকে গাবনা বলে।
গোল চাষি সজল জানান, এখন বাজারে গিয়ে গুড় বিক্রি করতে হয় না। একশ্রেণির খুচরা বিক্রেতারা বাড়ি এসেই গুড় নিয়ে যায়। প্রতিকেজি গুড় ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শিখা রানী হাওলাদার আক্ষেপ করে বলেন, বিয়ে পর থেকেই বছরের এ সময়ে রস ফুটিয়ে গুড় তৈরি করে আসছেন। আগে অনেক বেশি গুড় হত। এখন কমে গেছে।
গুড় ক্রেতা আনসার উদ্দিন জানান, অন্যান্য গুড়ের চেয়ে আলাদা স্বাদযুক্ত, সাশ্রয়ী হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে বলে গোলের গুঁড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গোলগাছ চাষি নিঠুর হাওলাদার ও অমল ঘরামি জানান, উপকূলীয় এলাকার সকল গোল গাছের বাগান প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো। এর চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজ এবং ব্যয়সাধ্য। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
বন বিভাগের মহিপুর ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি স্থানে গোলগাছের বিচি রোপণ করা হয়েছে। এতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। এ গাছগুলো উপকূলীয় এলাকার প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।