ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি : একজন করে গাইনী, শিশু ও কার্ডিওলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৫ জন। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে রোগীদের রেফার্ড করা হচ্ছে দূরের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষকে।
জেলা হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ২০০ শয্যার অনুমোদন পাওয়া এই হাসপাতালে ১০০ শয্যার জনবলে কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন ভর্তি থাকা, জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে সেবা দেওয়া হচ্ছে প্রায় ১২০০ রোগীকে। আড়াই বছর ধরে চক্ষু এবং নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই হাসপাতালটিতে। আর আজ পর্যন্ত দেওয়াই হয়নি চর্ম ও যৌন রোগের কোন চিকিৎসক।
গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থোপেডিক সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট মাহাবুব আলম, মেডিসিনের জুনিয়র কনসালটেন্ট হাসান মাসুদ খান, অর্থোপেডিক্সের ডা. এম এ কাদের ও সার্জারির বি কে এম তারিক হোসেন পদোন্নতি ও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন এবং মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. আনছার আলী অবসরে গেছেন। ফলে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০ জনের মধ্যে আছে মাত্র অ্যানেসথেসিয়ার একজন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ জনের মধ্যে আছে মাত্র গাইনী, শিশু, কার্ডিওলজি ও অ্যানেসথেসিয়ার চারজন।
সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের উত্তর ধানঘড়া গ্রামের ছকু মিয়া বলেন, গত ১০ নভেম্বর আমার মায়ের গলায় হাড় আটকে যাওয়ায় গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নাক-কান-গলার ডাক্তার না থাকায় রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করতে হয়েছে। সবমিলে তখন ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। গাইবান্ধা পৌর এলাকার সুখনগরের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, নভেম্বরে আমার স্ত্রীর কানে সমস্যার কারণে জেলা হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে রংপুরে প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এতে করে যাতাযাতে তো চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেই সাথে অর্থব্যয়ও হচ্ছে।
সন্ধানী ডোনার ক্লাবের উপদেষ্টা নাহিদ হাসান চৌধুরী রিয়াদ বলেন, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাবে রোগীদের বেশি টাকা ব্যয় করে ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে যেতে হয়, নয়তো রংপুর বা বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এতে করে গরিব মানুষ চরম ভোগান্তি ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এজন্য বেশি প্রয়োজন মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু ও নাক-কান-গলার চিকিৎসক।
এসব বিষয়ে জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহফুজার রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নিজস্ব ওয়েবসাইটে শূন্য জনবলের তালিকা আপডেট করা হয়েছে। তার মধ্যে থেকে ২৬ ডিসেম্বর সার্জারির একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট পাওয়া গেছে মাত্র। রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে গেলে ২০০ শয্যারই জনবল প্রয়োজন বলে জানান এই কর্মকর্তা।