বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক-২০২০ নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনরা প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। শুধু স্বাধীনতা পদক নয়, এবারের একুশে পদকও বিতর্কমুক্ত হতে পারেনি। পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় এমন কিছু ব্যক্তির নাম আছে, যাঁদের ঠিক কী কারণে, কী অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, তা কেউ বুঝতে পারছেন না। বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে উঠেছে প্রতিবাদ।
তবে বিশেষ করে সাহিত্যে সাবেক আমলা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদকে মনোনীত করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক দাবি তুলেছেন কবি মহাদেব সাহাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হোক। আনিসুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,
“আমরা জানি, এর আগে একজনকে অন্তত রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রদানের দিন ফোন করে বলা হয়েছিল তিনি যেন না আসেন। জুয়েল আইচ ভাইয়ের স্টাটাসের বক্তব্য সমর্থন করি। দুটো পুরস্কার কেড়ে নেয়া এবং অন্তত একটি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়া যেতে পারে।
এর আগে অন্তত একবার পুরস্কার ঘোষিত হওয়ার পর বিজ্ঞপ্তি জারি করে দুজনকে স্বাধীনতা পুরস্কারে যুক্ত করা হয়েছিল।
এবার তেমন করে কবি মহাদেব সাহাকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার দেবার অনুরোধ জানাচ্ছি। মহাদেব সাহার দুটো কবিতা আমার খুব প্রিয়।
তোমার বাড়ি
– মহাদেব সাহা—(তোমার পায়ের শব্দ)
এই বাড়িটি একলা বাড়ি কাঁপছে এখন চোখের জলে
ভালোবাসার এই বাড়িতে তুমিও নেই, তারাও নেই!
এই বাড়িটি সন্ধ্যা-সকাল তাকিয়ে আছে নগ্ন দুচোখ
একলা বাড়ি ধূসর বাড়ি তোমার স্মৃতি জড়িয়ে বুকে
অনাগত ভবিষ্যতের দিকেই কেবল তাকিয়ে থাকে,
কেউ জানে না এই বাড়িটি ঘুমায় কখন, কখন জাগে
স্তব্ধ লেকের কান্নাভেজা এই বাড়িটি রক্তমাখা!
এই বাড়িতে সময় এসে হঠাৎ কেমন থমকে আছে
এই বাড়িটি বাংলাদেশের প্রাণের ভিতর মর্মরিত,
এই বাড়িতে শহীদমিনার, এই বাড়িতে ফেব্রুয়ারি
এই বাড়িটি স্বাধীনতা, এই বাড়িটি বাংলাদেশ
এই বাড়িটি ধলেশ্বরী, এই বাড়িটি পদ্মাতীর
এই বাড়িটি শেখ মুজিবের, এই বাড়িটি বাঙালীর!
কফিন কাহিনী
– মহাদেব সাহা—(কী সুন্দর অন্ধ)
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বললো দেখো ভিতরে রঙিন
রক্তমাখা জামা ছিলো হয়ে গেছে ফুল
চোখ দুটি মেঘে মেঘে ব্যথিত বকুল!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে এক শবদেহ
একজন বললো দেখো ভিতরে সন্দেহ
যেমন মানুষ ছিলো মানুষটি নাই
মাটির মানচিত্র হয়ে ফুটে আছে তাই!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি শরীর
একজন বললো দেখো ভিতরে কী স্থির
মৃত নয়, দেহ নয়, দেশ শুয়ে আছে
সমস্ত নদীর উৎস হৃদয়ের কাছে!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বললো দেখো ভিতরে নবীন
হাতের আঙুলগুলি আরক্ত করবী
রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি!”
এছাড়াও আরো নানাজনের নাম উল্লেখ করে আলোচনা-সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা। কবি নিলয় রফিক ফেসবুকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন…
“কবি মোহাম্মদ রফিক এখনো স্বাধীনতা পুরস্কার পাননি!
কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা এখনো স্বাধীনতা পুরস্কার পাননি!”