শহিদুল্লাহ সরকার
এলিট ফোর্স র্যাব তার সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কর্মপরিকল্পনা ও অপতৎপরতা সম্পর্কে গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরে র্যাব তার গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি অভিযানিক দল অধিনায়ক মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম এর দিক নিদেশনায় এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ রাত ২২.০০ ঘটিকা হতে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ ভোর ০৪.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত অভিযান পরিচলানা করে ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকা হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এর নিম্নবর্ণিত ০৫ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করা হয়।
অলিউল ইসলাম @ সম্রাট @ আব্দুল্লাহ্ আব্দুল্লাহ (২৩), জেলা- ঝালকাঠী।
(খ) মোঃ মোয়াজ্জিম মিয়া @ শিহাদ @ আল্লাহর গোলাম (২০), জেলা-গোপালগঞ্জ।
(গ) মোঃ সবুজ হোসেন @ আব্দুল্লাহ @ আব্দুল্লাহ এবাজ উদ্দিন (২৬), জেলা- দিনাজপুর।
(ঘ) মোঃ আরিফুল হক @ আরিফ @ হৃদয় @ গাজওয়াতুল হিন্দ, জান্নাতের সবুজ পাখি (২০), জেলা- চাঁদপুর।
(ঙ) রাশিদা @ হুমায়রা @ ইনশাআল্লাহ আমি মুজাহিদা (৩৩), জেলা-ঢাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এর সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দেয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ হতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এর বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী বই, লিফলেট, ডিজিটাল কনটেন্টসহ মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অলিউল ইসলাম @ সম্রাট @ আব্দুল্লাহ্ আব্দুল্লাহ’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তিনি এইচএসসি পাশ করে কিছুদিন স্থানীয় মসজিদে আরবী শিক্ষা গ্রহন করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এর সক্রিয় সদস্য হিসাবে রাষ্টবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার কারনে ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রুজু হয়। ০২ মাস কারাভোগের পর বর্তমানে তিনি উক্ত মামলায় জামিনে আছেন। জেলখানায় থাকাকালীন সময়ে তিনি আটককৃত দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শে আসে এবং তাদের কাজ থেকে জঙ্গি সংক্রান্ত কার্যক্রমে আরো দিকনির্দেশনা গ্রহন পূর্বক অধিক দক্ষতা অর্জন করেন। ফেসবুক ছাড়াও তিনি বিভিন্ন এ্যাপস্ এর মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালু রাখেন। তিনি একটি উগ্রবাদী চ্যানেলের এ্যাডমিন হিসাবে উগ্রবাদী কার্যক্রম চালিয়ে যান এবং সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালান। তিনি ইতিপূর্বে আটক মাওলানা জসিমুদ্দীন রাহমানির অনুসারী। অনলাইনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গিদের সাথে তার পরিচয় হয় এবং তাদের কার্যক্রমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে উক্ত সংগঠনের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে অন্যতম এবং তিনি দক্ষিন অঞ্চলের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তিনি প্রায় ০৩ বৎসর যাবত এই সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে। তার সাথে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতার সাথে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মোয়াজ্জিম মিয়া @ শিহাদ @ আল্লাহর গোলাম ছাত্র জীবন থেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম তাকে আকৃষ্ট করতো। ধীরে ধীরে তিনি সশস্ত্র জঙ্গিবাদ এ অংশ গ্রহনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফেসবুকে আনাস আদনান নূর নামক জনৈক ব্যক্তির সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি তাকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামক জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। উক্ত ব্যক্তির কার্যক্রম এবং সংগঠনের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য পদ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। মেসেঞ্জারে একটি উগ্রবাদী গ্রুপের তিনি এ্যাডমিন হিসাবে কাজ করেন। আল্লাহর গোলাম আইডিতে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্রবাদের উদ্দেশ্যে চাঁদা আদায়ের ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেন। অনালাইন মোবাইল মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে তিনি চাঁদা সংগ্রহ করতেন। তার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের রেজিষ্টার উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সাভারের একটি মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষক হিসাবে দায়িত্য পালন করছিলেন। সশস্ত্র জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের প্রস্তুতি হিসাবে তিনি নিজেকে শারিরীকভাবে আরো সক্ষম করার জন্য ব্যায়ামের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয় করে নিয়মিত অনুশীলন করে আসছিলেন। তিনি বিভিন্ন এ্যাপস্ ব্যবহার করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতাদের সাথে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।
মোঃ সবুজ হোসেন @ আব্দুল্লাহ @ আব্দুল্লাহ এবাজ উদ্দিন। এইচএসসি পাশ সবুজ বর্তমানে সাভারে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে কর্মরত। স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ মোয়াজ্জিম মিয়া @ শিহাদ (২০) এর সরাসরি সংস্পর্শে আসে এবং তার কার্যক্রমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাথে জড়িয়ে পড়েন। মেসেঞ্জারে ভয়েস অব ইসলাম গ্রুপের তিনি একজন এ্যাডমিন। উক্ত গ্রুপ থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ এবং বিভিন্ন উগ্রবাদী পোস্ট দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি প্রায় ০২ বৎসর যাবত এই সংগঠনের সাথে জড়িত। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতাদের সাথে তার অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।
মোঃ আরিফুল হক @ আরিফ @ হৃদয় @ গাজওয়াতুল হিন্দ, জান্নাতের সবুজ পাখি। তিনি চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে গাজীপুর ইপসা এলাকায় বসবাস করছেন বলে জানান।