হারিয়ে যাওয়া পথশিশু রমজানকে উদ্ধার করে মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আর এন বি সিপাহি আনন্দ বড়ুয়া.
স্টাফ রিপোর্টার ঃ নাজমুল ইসলাম
অসহায় পথশিশু রমজান, গায়ের রং ফর্সা বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। বাবা মা দুজনের নামই অজানা। রমজানের মা সে একজন বাক প্রতিবন্ধী বাবা চলে গিয়েছে ওর জন্মের পরপরই। শিশুটি জন্মের পর থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বেড়ে উঠছে গতকাল বিকেল তিনটা থেকে নিখোঁজ। আর এন বি সিপাহি আনন্দ বড়ুয়ার এই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে পথশিশু রমজান। গত ১৫/০৩/২০২০ চাঁদপুর গামী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে সে ভিক্ষা করতে করতে উঠে যায় এবং ট্রেন ছেড়ে দেয়ার কারণে সে আর নামতে পারে নি৷ সন্ধ্যার সময় জানাজানি হয় রমজান ছেলেটি হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু কেউই বলতে পারছে না সে কিভাবে হারিয়েছে? বিষয়টি নজরে আসে রেওলয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সিপাহি আনন্দ বড়ুয়ার। তিনি পুরো বিষয়টি জেনে খুব মর্মাহত হোন৷ রমজানকে তিনি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে চাকুরী করার সুবাদে চিনতেন । প্রায় প্রতিদিনই তাকে আদর যত্নও খাবার বিতরণ করতেন। রমজানের হারিয়ে যাওয়ার খবর তার কাছে নিজ সন্তান হারানোর মত ছিল। স্টেশনে মাস্টারের সহায়তায় সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে তিনি জানতে পারেন সে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে গিয়েছিল। এই ছোট্ট শিশু কোন স্টেশনে নামতে পারে তা ছিল সবার অজানা। প্রায় প্রতিটি স্টেশনে রমজানের খোঁজ নেয়া হয় সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।সামাজিক সংগঠন আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশন রমজানকে একই ভাবে খোঁজ করে আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সদস্যবৃন্দ। আজ মুজিব শতবর্ষ ও জাতীয় শিশুদিবস ছিল। এই শিশুদিবসে হারিয়ে যাওয়া রমজানকে ফিরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও আলোর আশার যুব সদস্যরা আনন্দ উল্যাস করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান, সহকারী উপ পরিদর্শক মোহাম্মদ শওকত হোসেন ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সকল সদস্যবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মুহাম্মদ আনোয়ার এলাহি ফয়সাল, প্রাইমারি চিকিৎসক সোসাইটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। এসময় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী রেলওয়ে জনগণের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকে।পথশিশু রমজানকে উদ্ধার করার জন্য আর এন বি সিপাহি আনন্দ বড়ুয়া সহ অন্যান্যরা যে পরিশ্রম করেছে তা মুজিববর্ষের প্রথম দিনে আমাদের জন্য অনেক বড় দৃষ্টান্ত। মুজিব বর্ষে নয় শুধু সারা বছর ব্যাপী এরকম ভালো কাজ করা উচিৎ আমাদের সকলের৷ সামাজিক সংগঠন আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশন যে ভালো কাজগুলো করে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী তাদেরকে সব সময় সহযোগিতা করেছে ভবিষ্যতেও করবে। যেন এই মুজিববর্ষ থেকে পথশিশু সংখ্যা হ্রাস পায়, প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদ থাকে ও হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায় তার চেষ্টা করতে হবে আমাদের সকলকে। আন্দন্দ বড়ুয়া বলেন,রমজানকে ফিরে পাওয়া আমার কাছে অনেক আনন্দের ছিল। প্রতিটি শিশু যেন তার অধিকার যথাযথ পায় আমাদের কে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে৷ রমজান পথশিশু হিসাবে সে রাষ্ট্রের শিশু, তাই তাকে খুঁজে বের করা আমার নৈতিক দায়িত্ব ছিল অন্যান্য দায়িত্বের মতই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবেকের তাড়নায় পোস্ট করি তাতেই খুব সহজে পেয়ে যায় রমজানকে। এরপর রমজানকে আলোর আশা যুব ফাউন্ডেশনের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয় যেন এই শিশুটি পড়াশুনা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার পায়। আলোর আশার সদস্যরা বলেন তারা রমজানকে সব সময় দেখাশুনা করবে এবং রমজানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে সে যেন শতভাগ অধিকার পায় যেহতু সে একজন বাক প্রতিবন্ধী মায়ের অসহায় সন্তান।