কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক ০২ (দুই) টি ওয়ান শুটার গান ও ০১ (এক) টি মোটরসাইকেলসহ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিম গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ ০২ (দুই) জন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার
সোমবার দুপুর ১২.১৫ ঘটিকায় কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ কার্যালয়ে পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক ০২ (দুই) টি ওয়ান শুটার গান ও ০১ (এক) টি মোটরসাইকেলসহ খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিম গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ ০২ (দুই) জন সন্ত্রাসী গ্রেফতার সংক্রান্তে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় বলেন,
“খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সদাসর্বদা তৎপর। আমরা রমজানের শুরু থেকে এবারে ঈদ উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গুলোর মধ্য রয়েছে ট্রাফিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ফুটপথ পুনরুদ্ধার, বিভিন্ন মার্কেটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাত্রিকালীন চেকপোস্ট এবং টহলের মাধ্যমে যখন দোকানপাট ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তার নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই অনুযায়ী আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঈদের আগের দিন চাঁদ রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যেই খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে মাদক, জঙ্গি, অস্ত্র, গোলাবারুদ, চোরাই মোটর সাইকেল, অনলাইন জুয়াড়ি, ভূমিদস্যু ও কিশোর গ্যাং সংক্রান্তে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চেক পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতাও বৃদ্ধি করা হয়। গত ০৭ এপ্রিল দিবাগত রাত অর্থাৎ ০৮/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম হাফিজনগর এলাকায় চেকপোস্ট ডিউটি করা কালে রাত্র অনুমান ০৩:৩০ ঘটিকার সময় মোটরসাইকেল যোগে আসা দুইজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থামিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। আগত দুইজন ব্যক্তির সন্দেহজনক এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা দরুণ পুলিশ সন্দেহ হওয়ায় তাদের দেহ তল্লাশি করে। তল্লাশিকালে আসামী (১) আব্দুল বাছেদ বিকুল(২৭), পিতা-আব্দুল আউয়াল, সাং-মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া, থানা-দৌলতপুর, খুলনা মহানগরী, এ/পি সাং-পূর্ব রূপসা বাগমারা, থানা-রূপসা, জেলা-খুলনার হেফাজতে থাকা ০১ (একটি) টি ওয়ান শুটার গান এবং (২) সোলাইমান ইকবাল ইশান(২১), পিতা-ইকবাল হোসেন, সাং-বাকসার, থানা-বরুড়া, জেলা-কুমিল্লা এর হেফাজতে থাকা ০১ (একটি) টি ওয়ান শুটার গানসহ সর্বমোট ০২ টি ওয়ান শুটার গান উদ্ধারপূর্বক আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের ব্যবহৃত ০১ (এক) টি Apache RTR 4v মোটরসাইকেল যাহার রেজিঃ নং-বাগেরহাট মেট্রো-ল-১১-৭৩১৬ জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার মামলা নং-০৫, তাং-০৮/০৪/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-19 A The Arms Act, 1878 রুজু করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের পিসিপিআর যাচাই করে জানা যায় যে, আসামী আব্দুল বাছেদ বিকুল খুলনা মহানগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিম গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং সোলায়মান ইকবাল ইশান নূর আজিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। বহনকৃত অবৈধ অস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহারের জন্য তারা নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, মারামারি ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত একাধিক মামলা এবং অভিযোগ রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে জানা যায় যে, আসামী আব্দুল বাছেদ বিকুল খুলনা মহানগরীতে অবস্থান করে এলাকার সমস্ত তথ্য নূর আজিমের কাছে প্রেরণ করে ও নূর আজিমের নির্দেশনা মোতাবেক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তার কোন নির্দিষ্ট পেশা নাই। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে মূলত সে জীবিকা নির্বাহ করে। ব্যক্তিগত জীবনে সে বিবাহিত। বিকুলের স্ত্রী স্বর্ণা তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সহযোগী, কিছুদিন পূর্বে একটি চাঁদাবাজি মামলায় তার স্ত্রী কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বাবা ও একজন মাদক ব্যবসায়ী। বিকুলের পরিবার মূলত প্রথম দিকে মাছ ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলেও পরবর্তীতে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
অপর আসামী সোলাইমান ইকবাল ইশানের জন্ম এবং বেড়ে উঠা কুমিল্লায়। তারা পিতা একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যপারে বিকুলের সাথে সোলাইমান ইকবাল ইশানের পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে সে বিকুলের হাত ধরে নূর আজিম গ্রুপে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে, পুলিশ রিমান্ডে এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে অবৈধ অস্ত্রের উৎস, অস্ত্র সরবরাহে কারা জড়িত, কোথায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিলো তার রহস্য উদঘাটন করে এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আসন্ন ঈদসহ সামনের দিন গুলোতে খুলনা মহানগরীর সম্মানিত নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
এ সময় কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) জনাব সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) জনাব মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) পলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত জনাব মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান এবং সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান-সহ পুলিশ অফিসারবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দের উপস্থিত ছিলেন।