
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে বড় ধরনের সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই লক্ষ্যে সম্প্রতি পরপর চারটি বৈঠক করেছে বিনিয়োগ সমন্বয় কমিটি। এসব বৈঠকের মাধ্যমে এসএমই খাতের অর্থায়ন, নীতিমালা এবং ব্যবসা পরিচালনার প্রক্রিয়া সহজ করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
(১ নভেম্বর, ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।
উদ্যোগের নেতৃত্ব ও মূল ফোকাস
বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় এসএমই উদ্যোক্তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাস্তবায়িত ও প্রক্রিয়াধীন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
এসএমই খাতের গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং অনেকগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত সিদ্ধান্ত:
বৈদেশিক অর্থ সংরক্ষণ: বৈদেশিক অর্ডার থেকে প্রাপ্ত অর্থের ১০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম নীতিমালা থেকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়া আগাম অর্থপ্রদানের সীমা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ (ইআরকিউ) হিসাব থেকে পরিশোধের সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে (২৩ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর, ২০২৫ এর পরিপত্র)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত (৯ অক্টোবর):
আর্থিক পণ্য নকশা: এসএমই খাতের জন্য চলতি মূলধন বা উদ্যোক্তাবান্ধব নতুন আর্থিক পণ্য নকশার উদ্যোগ নিতে কর্মশালা আয়োজনের সিদ্ধান্ত।
লাইসেন্সবিহীন ঋণ: বাণিজ্য লাইসেন্স ছাড়া পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া সম্ভব কি না, তা যাচাইয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
অন্যান্য বাস্তবায়নাধীন উদ্যোগ:
কোটা বরাদ্দ: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বছরে ন্যূনতম তিন হাজার মার্কিন ডলারের পৃথক বৈদেশিক মুদ্রা কোটা বরাদ্দের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অনলাইন বিক্রির অর্থ দ্রুত উদ্যোক্তার ব্যাংক হিসাবে জমা নিশ্চিত করা এবং অনলাইন বাজারের মাধ্যমে রপ্তানিতে বিদ্যমান নীতিমালায় বি-টু-বি (B2B) ও বি-টু-সি (B2C) মডেল অন্তর্ভুক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়া।
নমুনা ছাড়প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ করতে এনবিআরের পর্যবেক্ষণ জোরদার করা।
এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে এখন থেকে আট অঙ্কের মধ্যে প্রথম চার অঙ্ক মিলে গেলেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন সম্পন্ন করবে (২৮ আগস্টের সিদ্ধান্ত)।
বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, "সংস্কারের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিতে গতিশীলতা বাড়ানো... আমাদের অবশ্যই এসব উদ্যোক্তাদের গতিশীলতা বাড়ানোতে সাহায্য করতে হবে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিটি পর্যায়ে সহজ করতে হবে—অর্থায়ন থেকে অর্থপ্রদান ও সরবরাহব্যবস্থা পর্যন্ত। সরকারকে এর সহায়ক হতে হবে, বাধা নয়।"